রাবিতে অ্যাডহকে নিয়োগ পেলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ‘পৃষ্ঠপোষক’, সমালোচনার ঝড়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জনসংযোগ দফতরে অনুসন্ধান কাম তথ্য কর্মকর্তা পদে অ্যাডহকভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ‘পৃষ্ঠপোষক’ রাশেদুল ইসলাম। গতকাল সোমবার (৩ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এ নিয়োগ দেওয়া হয়।
তার নিয়োগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সোমবার বিকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘রাশেদুলকে কোনও কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’ এদিকে এই নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে আজ মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ।
নিয়োগের আদেশ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরে ২২,০০০-৫৩০৬০/- বেতন স্কেলে মাসিক ২৩,১০০/- (তেইশ হাজার একশত) টাকা মাত্র বেতনে অনুসন্ধান কাম তথ্য অফিসার পদে অ্যাডহকভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রাশেদুল ইসলামকে। যা তার যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত রাশেদুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষায় ২ দশমিক ৭৭ সিজিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। একই বিভাগ থেকে তিনি ২০২০ সালে ৩ দশমিক শূন্য ৭ সিজিপিএ পেয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বাসা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায়। ছাত্রাবস্থায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসক্লাবের সঙ্গে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন।
নিয়োগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রাকিব হোসেন বলেন, ‘এটি একটি অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য নিয়োগ দিয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ বলেন, ‘সমন্বয়কদের কোনও কোটায় চাকরি দেওয়া হচ্ছে কি না, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। এটা খতিয়ে দেখার বিষয়। একমাত্র মেধার মাধ্যমেই চাকরি হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
নিয়োগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, ‘উপাচার্যের আদেশেই রাশেদুল ইসলামকে অ্যাডহক ভিত্তিতে আগামী ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, মিডিয়ার ব্যাপারে তার যে চিন্তাভাবনা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে সে জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। আমি আমার বিবেচনায় তাকে নিয়োগ দিয়েছি। আমার ধারণা, তিনি তার যোগ্যতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন।’
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ২৯ জুলাই রাজশাহী নগরের কোর্ট স্টেশন এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন রাশেদুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যান। পরে ৩১ জুলাই তাঁকে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি মুক্তি পান। পরে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে রাশেদুল ইসলামকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ‘পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আন্দোলনকারী সমন্বয়কদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন বলে একাধিক সমন্বয়ক জানিয়েছেন।
